You are currently viewing স্কিলকে কিভাবে ব্যবসায় রূপান্তরীত করা যায়?

স্কিলকে কিভাবে ব্যবসায় রূপান্তরীত করা যায়?

আমার ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। প্রায় ৪ মাস পরে আবার লিখতে বসলাম। একটা সময় প্রতিদিন আমি কিছু লিখার চেষ্টা করতাম। বিভিন্ন কারনে এখন আর আগের মত সময় হয়না, তাই লিখতেও পারিনা।

আজ কয়েকটা দিন কোন কাজেই মন বসছেনা, তাই চিন্তা করলাম একটা টপিক নিয়ে লিখি। আজকের টপিক – স্কিলকে কিভাবে ব্যবসায় রূপান্তরীত করা যায়?

আজ সকাল ভোরে ইউটিউবে খালিদ ফারহান ভাইয়ের একটা ভিডিও দেখি, ভিডিওর টপিক ছিল, স্কিল থাকলেই কি আপনি ক্যারিয়ারে ভাল কিছু করতে পারবেন?

আমার পুরো ভিডিওটা খুব ভাল লেগেছে, তাই চিন্তা করলাম এই টপিকে আমার মত করে কিছু লিখে রাখি। তবে লিখার জন্য উনার ভিডিওটা আমাকে কিছুটা হলেও অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

স্কিল কি?

স্কিল কি, এই ব্যাপারে বুঝাতে হলো আমার লাইফের কিছু গল্প বলতেই হয়। আমি যখন ২০১৬ সালের দিকে অনলাইনে কিছু করে ইনকাম করার কথা চিন্ত করি, তখন ইউটিউবে Earn Money লিখে সার্চ দিলে অদ্ভুত কিছু টিউটোরিয়াল চোখে পড়তো।

অনেকটা এমন ছিল – ক্লিক করে ইনকাম করুন, দিনে ১০০ ডলার ইনকাম করুন মাত্র ৪ ঘন্টা কাজ করেই, ইত্যাদি টপিকের ভিডিও গুলো তখন আমার মাঝে অন্য রকম ধারণা তৈরি করেছিল।

আমিও তখন বিশ্বাস করতাম, হয়তো ক্লিক করেই অনেক টাকা ইনকাম করা যায়। আমি প্রায় এক মাস এইসব ক্লিক টাইপের সাইটে একাউন্ট করে ইনকাম করার কতই না বৃথা চেষ্টা করেছি। আমার এখন সেসব চিন্তা করলে নিজেকে অনেক বোকাই মনে হয়।

আমার এইসব ক্লিক টাইপের ইনকাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে খুব বেশি সময় নিতে হয়নি। আস্তে আস্তে আমি অনলাইনের এই নেগেটিভ মেথড গুলো থেকে নিজেকে একেবার ঘুটিয়ে নেই।

এর পর একটা সময় এসে আমি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখার উদ্দেশ্যে অনলাইনে লাইভ একটা কোর্স করি ৬২০ টাকা দিয়ে। এক মাস ১৫ দিনের মত সেই লাইভ ক্লাস থেকে আমি Jvzoo অ্যাফিলিয়েট সম্পর্কে জানতে পারি।

কিভাবে Jvzoo থেকে প্রোডাক্ট বাছাই করে, সেই প্রোডাক্টের রিভিউ কনটেন্ট লিখে ইনকাম করা যায়। তখন বুঝতে পারলাম যে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটা স্কিল। ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটা পার্ট হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে একটু বিস্তারিতঃ

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে আবার চলে আসে, অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, CPA মার্কেটিং, ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েট করার মাধ্যমেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়। মোট কথা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে অনেক বড় একটা পার্ট।

আপনি যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে সঠিক নলেজ অর্জন করতে পারেন, তাহলে আপনি নিজেকে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে ডিসপ্লে করতে পারেন। আর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনলাইনে ইনকাম করার ক্ষেত্রে অনেক পজিটিভ একটি স্কিল।

যেই স্কিলটি আপনাকে অন্য যেকোন স্কিলকে ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে অনেক বেশি হেল্প করবে।

এবার আমরা জেনে নেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে কি কি বিষয় সম্পর্কে নলেজ থাকতে হয়?

এসইওসার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কে আপনার নলেজ না থাকলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যাপারটাই আপনার কাছে ক্লিয়ার হবেনা। সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট নলেজ থাকা আবশ্যক।

ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টোমাইজেশন – অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার অবশ্যই একটা ওয়েবসাইট দরকার হবে। আর ওয়েবসাইট তৈরি করার ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় CMS (Content Management System) হলো ওয়ার্ডপ্রেস। তাই ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কেও আপনার নলেজ থাকতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং – ফেসবুক, টুইটার, রেডিট, ইনস্ট্রাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, ইউটিউব ইত্যাদি সোশ্যাল ডিমিয়াতে কিভাবে কনটেন্ট মার্কেটিং করে বিজিটর নিয়ে আসতে হয়, এই ব্যাপার গুলো সম্পর্কে নলেজ রাখার নামই হলো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

ফটোশফ ব্যাসিক – আপনি যখন কোণ প্রোডাক্ট, ডিজিটাল সফটওয়্যার নিয়ে রিভিউ লিখবেন, তখন পিকচারের ব্যাপার গুলো আসবেই। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফিচার ইমেজ, প্রোডাক্টের ইমেজ, এই ব্যাপার গুলো চলে আসে। তাই ইমেজ ইডিটিং এর জন্য আপনাকে ফোটোশপ অথবা অন্যান্য অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমের হেল্প নিতে হবে।

এই ক্ষেত্রে ফটোশনের ব্যাসিক নলেজ থাকলে আর তেমন কিছু লাগেনা। তাই ফটোশপের ব্যাসিক নলেজ থাকা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অনেক পজিটিভ একটি ব্যাপার।

ভিডিও এডিটিং ব্যাসিক – কোন প্রোডাক্টকে বিজিটরের সামনে ভিডিও আকারে প্রেজেন্ট করতে পারলে সবচেয়ে বেশি ইফেক্ট পড়ে। তাই ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে ব্যাসিক নলেজ থাকাও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন।

এমন কি কি স্কিল আছে যা ব্যবসায় রূপান্তরিত করা যায়?

পজিটিভ যেকোন স্কিলকেই এখন ব্যবসায় রূপান্তরিত করা যায়। আমি কয়েকটা উদারণ দিয়ে আজকের আর্টিকেল শেষ করব।

গ্রাফিক্স ডিজাইন

আপনি খুব ভাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। হয়তো ফাইবার, আপওয়ার্ক বাঁ অন্য কোন মার্কেট প্লেসে নিয়মিত ক্লায়েন্টের কাজ করে যাচ্ছেন। আপনি কিভাবে আপনার এই গ্রাফিক্স ডিজাইন স্কিল কে ব্যবসায় রূপান্তরীত করে নিজের ইনকাম কে আরো বৃদ্ধি করতে পারেন?

ব্যপারটা খুব সিম্পল, Graphicriver.net এ আপনার তৈরি করা ইউনিক ডিজাইন সেল করে ইনকাম করতে পারেন। কপি ডিজাইন হলে হবেনা, আপনি যদি ভাল মাপের ডিজাইনার হয়ে থাকেন, তাহলে ইউনিক ডিজাইন করা আপনার জন্য অবাস্তব কিছুইনা।

গ্রাফিক রিভারে বিভিন্ন টপিকে ডিজাইন বাই সেল হয়। বিজনেস কার্ড, আইকন, ভ্যাকটর, ক্যারেক্টার ইত্যাদি হরেক রকমের ডিজাইন বাই সেল হয়।

এছাড়া আপনি নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করেও নিজের তৈরি কৃত ডিজাইন সেল করতে পারেন। এমনিতে আপনি বিভিন্ন মার্কেট প্লেস থেক ক্লায়েন্ট না নিয়ে ওয়েবসাইটের মাধ্যেমেও সরাসরি ক্লায়েন্ট নিয়ে আসতে পারেন।

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট নিয়ে আসতে পারলে অতিরিক্ত ফি দিতে হয়না, মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা ফি দিতে হয়।

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের গ্রাফিক্স ডিজাইন স্কিল সেল দিতে হলে আপনাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর নলেজ টা থাকতে হবে, যেটা আমি উপরেই বলেছিলাম।

ওয়েবডেভেলপার

আপনি যদি একজন ওয়েবডেভেলপার হিসেবে কোন কম্পানি বাঁ মার্কেটপ্লেসে কাজ করে থাকেন, তাহলে আপনার এই ডেভেলপিং স্কিল কেও ব্যবসায় রূপান্তরীত করতে পারবেন।

একই সিস্টেমে নিজের একটা পারসোনাল ওয়েবসাইট করবেন, যেখানে আপনার ওয়েবডেভেলপার স্কিল সম্পর্কে কিছু সেম্পল দিয়েন। আপনি এই পর্যন্ত কয়টা ক্লায়েন্টের কাজ করেছেন, এই ব্যাপার গুলো আপানার সাইটে ফোকাস করবেন।

এরপর আবারো সেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি পার্ট এসইও চলে আসে। কারন সাইট তৈরি করে কনটেন্ট দিয়ে রেখে দিলেই বিজিটর আসবেনা।

বিজিটর নিয়ে আসতে হলে আপনাকে এসইও সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যখন প্রোফার এসইও করে আপনার সাইট কে Google Search Engine এ রেঙ্ক করাতে পারবেন। তখন গুগল থেকে আপনার কাঙ্খিত বিজিটর এসে আপনার ওয়েবডেভেলপিং এর সার্বিস গুলো নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রোকাশ করবে।

এভাবে আপনি ওয়েবডেভেলপিং স্কিলকেও ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে পারেন।

এভাবে প্রায় প্রতিটা স্কিল কেই ব্যবসায় রূপান্তরিত করা যায়, যদি সঠিক ভাবে চিন্তা করে ইমপ্লিমেন্ট করতে পারেন।

আমার আর্টিকেলের উদ্দেশ্য ছিল, স্কিল কে কিভাবে ব্যবসায় দাঁড় করিয়ে অনেক বেশি ইনকাম করা যায়। আর এই টাইপের ইনকাম আপনাকে একজন উদ্যোক্তা হতেও সহায়তা করবে।

আপনি চাইলে আপনার অফলাইনের যেকোন স্কিলকেও অনলানে ব্যাবসায় রূপারন্তরীত করতে পারেন একই সিস্টেমে। শুধু একটু চিন্তা করে দেখুন। কারন স্কিল থাকলেই আপনি পুরোপুরি সাকসেস একজন পারসোণ এটা বলতে পারবেন না।

আপনি একটু আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, অনেক স্কিলফুল মানুষ টাকার অভাবে অনেক কষ্টে জীবন অতিবাহীত করছে।

ছোট একটা উদাহারণ দিলে হয়তো ক্লিয়ার হবেন – আপনার স্কুলের একজন গণিত শিক্ষক আছে, যে অনেক ভাল গণিত বুঝাতে পারে। ঐ শিক্ষকের মত আর কেউ গণিত বুঝাতে পারেনা, ব্যাপারটা এমন। কিন্তু সেই শিক্ষকের পরিবার অনেক কষ্টে দিন অতিবাহিত করে।

এর কারন কি? আপনার স্কুকের সেই শিক্ষক তার স্কিল কে ব্যবসায় রূপান্তরিত করিনি, সে হয়তো জানেনা কিভাবে তার এই স্কিল কে ব্যবসায় রূপান্তরিত করে ইনকাম করা যায়।

আপনার সেই শিক্ষক যদি তার স্কিল কে ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যেম প্রচার করতে পারতো, তাহলে তার স্কিল সম্পর্কে অনেক মানুষ জানতে পারত এবং ইউটিউব থেকে কিছু ইনকামও তার হতো।

শুধু ইউটিউব না, আরো অনেক মাধ্যমেই তার সেই স্কিল কে ব্যবসায় রূপান্তরীত করে ইনকাম করা যেত।

শেষকথা

স্কিলকে কিভাবে ব্যবসায় রূপান্তরীত করা যায়? এই টপিকে আজকের ব্লগটি এখানেই শেষ করছি। ভাল লাগলে আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

অনেকদিন পরে লিখেছি, জানিনা কতটা বুঝাতে পেরেছি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন, পজিটিভ কমেন্টের মাধ্যমে ভুল গুলি ধরিয়ে দিতে পারেন।

কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে করে ফেলুন। ধন্যবাদ!

Kawkab Nadim

আস সালামু আলাইকুম! আমি কাওকাব! কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে অনার্স করেছি ☹️। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার পরে অনলাইন মার্কেটিং এবং টেকনোলজি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে আমার মন থেকে ভালোলাগা কাজ করে। মাঝে মধ্যে আমার বিভিন্ন টপিকে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে, আর সেই ভালো লাগা থেকেই আমার এই পারসোনাল ওয়েবসাইট। আমার আর্টিকেল গুলো আপনাদের ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে জানিয়ে দিতে ভুলবেন না। নিজেকে নিয়ে আর বলার কিছু নেই। আমার সাথে কানেক্ট থাকতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ!

Leave a Reply