নেটওয়ার্ক টপোলজি নিয়ে আজকের বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নিয়ে আমাদের আরেকটি ব্লগ এখান থেকে পড়ে আসতে পারেন।
আজকের ব্লগে আমরা নেটওয়ার্ক টপোলজি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মধ্যে টপোলজি একটি গুরুত্বপূর্ন পার্ট।
নেটওয়ার্ক টপোলজি কি?
নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ফিজিক্যাল ডিভাইস বাঁ কম্পোনেন্ট কে আমরা নেটওয়ার্ক টপোলজি (Network Topology) বলে থাকি।
উদাহারণ হিসেবে বলা যেতে পারে – ক্যাবল, পিসি, রাউটার এই ডিভাইস বাঁ কম্পোনেন্ট গুলো যে সিস্টেমে নেটওয়ার্কের মধ্যে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে, একেই টপোলজি সিস্টেম বলা হয়।
নেটওয়ার্ক টপোলজিতে সাধারণত নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ফিজিক্যাল (Layout) অবস্থার বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
নেটওয়ার্ক টপোলজির প্রকারভেদ সমূহ
- বাস টপোলজি (Bus Topology System)
- রিং টপোলজি (Ring Topology System)
- স্টার টপোলজি (Star Topology System)
- ট্রি টপোলজি (Tree Topology System)
- হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology System)
- মেশ টপোলজি (Mesh Topology System)
বাস টপোলজি (Bus Topology System)
যেই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে একটু মূল তার কে কেন্দ্র করে কয়েকটি ওয়ার্ক্সস্টেশন বাঁ কম্পিউটার যুক্ত থাকে, সেই নেটওয়ার্ক সিস্টেম কে বাস টপোলজি (Bus Topology System) বলে।
বাস টপোলজিতে একটি প্রধান ক্যাবল থাকে, যাকে ব্যাকবোন (Backbone) হিসেবে চিন্তা করা হয়। যখন নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ব্যাকবোনে চলাফেরা করবে, তখন প্রাপক হিসেবে কম্পিউটার সিগন্যাল গ্রহণ করবে আর বাকিরা এটিকে অগ্রাহ্য করবে।
এই টপোলজি সিস্টেম ছোট হওয়ার কারনে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব সহজ। এই সিস্টেমে কোন একটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলেও সম্পূর্ন নেটওয়ার্ক সিস্টেম অকেজো হয়ে যায়না।
- বাস টপোলজির কিছু উপকারিতা
- এর নেটওয়ার্ক সিস্টেম ছোট হওয়াতে এটি ব্যবহারে অনেকটাই ইজি।
- এই সিস্টেমে ক্যাবলের পরিমান অনেক কম হওয়ার খরচের পরিমানও কমে যায়।
- রিপিটার ব্যবহারের মাধ্যমে এর ব্যাকবোন (Backbone) কে সম্প্রসারণ করা খুব ইজি।
- এই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে কোন একটি কম্পিউটার নষ্ট হলে গেলেও পুরো সিস্টেম অকেজো হয়ে যায়না।
- বাস টপোলজির কিছু অপকারিতা
- এই সিস্টেমে কম্পিউটারের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে ট্রান্সমিশনে কিছুটা সমস্যা হয়।
- এই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে ডাটা ট্রান্সফার স্প্রিড কিছুটা স্লো হয়ে থাকে।
- এই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে সমস্যা নির্ণয় অনেকটা জটিল।
রিং টপোলজি (Ring Topology System)
এই সিস্টেমে পাশাপাশি কয়েকটি কম্পিউটার রিংয়ের ন্যায় যুক্ত হয়ে ডাটা ট্রান্সফার করে থাকে বলে এই সিস্টেম কে রিং টপোলজি বলে। রিং টপোলজিতে ট্রান্সফারকৃত ডাটা বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাপক কম্পিউটার ডেটা গ্রহন না করে।
এই টপোলজি সিস্টেমে কোন কেন্দ্রীয় কম্পিউটা থাকেনা, এই সিস্টেমে প্রতিটা কম্পিউটার সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই টপোলজিতে যেহেতু প্রতিটা কম্পিউটার বৃত্তাকার অবস্থায় থাকে এবং প্রথম কম্পিউটারটি শেষ কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে, তাই এই সিস্টেমে মাঝখান থেকে যেকোন একটি কম্পিউটারে সমস্যা সৃষ্টি হলে আর ডেটা ট্রান্সফার হবেনা।
- রিং টপোলজির কিছু উপকারিতা
- এই টপোলজি সিস্টেমে কোন সার্বার বাঁ কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের দরকার হয়না।
- এই টপোলজি নেটওয়ার্কে অবস্থিত প্রতিটা কম্পিউটার সমানভাবে গুরুত্ব বহন করে।
- এই সিস্টেমে ইচ্ছেমত কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়ালে খুব একটা সমস্যা হয়না।
- রিং টপোলজির কিছু অপকারিতা
- এই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে যেকোন একটি কম্পিউটারে সমস্যা হলে ডেটা ট্রান্সফার হবেনা।
- এই টপোলজিতেও নেটওয়ার্ক সিস্টেমে সমস্যা নির্ণয় করা বেশ জটিল।
স্টার টপোলজি (Star Topology System)
যেই নেটওয়ার্ক টপোজলিতে একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে অন্য সকল কম্পিউটার গুলো বৃত্তাকারভাবে যুক্ত থেকে ডেটা ট্রান্সফার করে তাকে স্টার টপোলজি (Star Topology System) বলে। এ নেটওয়ার্ক সিস্টেমে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মাধ্যমেই সমস্থ ডেটা আদান প্রদান হয়।
এই টপোলজি সিস্টেমে কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ছাড়া অন্য যেকোন কম্পিউটারে সমস্যা দেখা দিলে সাধারনত ডেটা ট্রান্সফারে তেমন একটি সমস্যা হয়না।
- স্টার টপোলজির কিছু উপকারিতা
- এই টপোলজি সিস্টেমে কোন জামেলা ছাড়াই যেকোন মুহূর্তে নতুন কম্পিউটার যুক্ত করা যায়।
- এই সিস্টেমে খুব সহজেই সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
- হঠাৎ কোন একটি কম্পিউটার নষ্ট বাঁ সমস্যা হলে ডেটা ট্রান্সফারে কোন জামেলা সৃষ্টি হয়না।
- এই নেটওয়ার্ক সিস্টেমে খুব সহজেই সমস্যায় আক্রান্ত কম্পিউটার টিকে সরিয়ে নেওয়া যায়।
- স্টার টপোলজির কিছু অপকারিতা
- কেন্দ্রীয় অবস্থানে থাকা কম্পিউটারে কোন প্রকার জামেলা সৃষ্টি হলে সম্পূর্ন ডেটা ট্রান্সফার বন্ধ হয়ে যাবে।
- এই টপোলজি সিস্টেমে অনেক বেশি ক্যাবল ব্যবহৃত হয় বলে খরচের পরিমানও বেড়ে যায়।
- কম্পিউটারে সংখ্যা খুব বেশি বৃদ্ধি করলে ডেটা ট্রান্সফার স্প্রিড হ্রাস পায়।
ট্রি টপোলজি (Tree Topology System)
ট্রি টপোলজিতে অনেক গুলো স্টার টপোলজি গাছের শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিন্যস্ত থাকে বলে একে ট্রি টপোলজি বলা হয়। এই টপোলজি সিস্টেমে হোস্ট হিসেবে এক বাঁ একাধিক কম্পিউটার পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে।
অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে প্রথম স্তরের কম্পিউটার গুলো, দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলোর হোস্ট হয় এবং দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলো তৃতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলোর সাথে হোস্ট হিসেবে যুক্ত থাকে।
অফিস, আদালত এবং ছোট খাট আইটি বিজনেস গুলোতে এই টাইপের নেটওয়ার্ক টপোলজি সিস্টেম খুব বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।
- ট্রি টপোলজির কিছু উপকারিতা
- যেকোন আইটি অফিসগুলোতে এই টপোলজি পজিটিভ উপযোগি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- এই টপোলজিতে নতুন কোন সংযোগ বাদ দিলে ডেটা ট্রান্সফারে তেমন কোন সমস্যা হয়না।
- কিছু অপকারিতা
- এই টপোলজি সিস্টেম অনেকটা জটিল।
- মেইন রুট বাঁ সার্ভারে কোন সমস্যা দেখা দিলে পুরো টপোলজি সিস্টেম অচল হয়ে যাবে।
হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology System)
কয়েকটি টপোলজি নিয়ে গঠিত টপোলজিকে হাইব্রিড টপোলজি বলা হয়। অর্থাৎ বাস, স্টার, রিং ইত্যাদি টপোলজি গুলো নিয়ে গঠিত নতুন এবং বিশাল টপোলজি সিস্টেম কে হাইব্রিড টপোলজি বলা হয়।
উদাহারণ হিসেবে পুরো ইন্টারনেট সিস্টেম কে হাইব্রিড টপোলজির সাথে তুলনা করা যায় – ইন্টারনেট হলো বিশাল একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম, যেখানে সব টাইপের টপোলজি গুলো বৃদ্ধমান আছে।
হাইব্রিড টপোজলির সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো নির্বর করবে, হাইব্রিড টপোলজিতে ব্যবহৃত অন্যান্য টপোলজিগুলোর সুবিধা এবং অসুবিধা গুলোকে কেন্দ্র করে।
মেশ টপোলজি (Mesh Topology System)
কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মধ্যে যে ডিভাইস বাঁ কম্পিউটার থাকে, এই ডিভাইস বাঁ কম্পিউটারগুলোর মধ্যে যখন অতিরিক্ত সংযোগ দেওয়া থাকে তখন তাকে মেশ টপোলজি সিস্টেম বলা হয়।
এই টপোলজি সিস্টেমে অতিরিক্ত বাঁ অপ্রয়োজনীয় লিঙ্ক দেওয়া থাকে বলে অতিরিক্ত ডেটা ট্রান্সফারের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। এছাড়া এই সিস্টেমে নেটওয়ার্কের নেগেটিভ সমস্যা খুব সহজে সমাধান করা যায়।
- মেশ টপোলজির কিছু উপকারিতা
- খুব সহজে এই টপোলজি সিস্টেমে সমস্যার সৃষ্টি হয়না।
- ডেটা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে অন্য টপোলজি থেকে এই টপোলজিতে নিশ্চয়তার হার বেশি হয়।
- অনেক সহজেই যেকোন সমস্যা সমাধান করা যায়।
- অন্য টপোলজি গুলোর তুলনায় এই টপোলজিতে ডেটা ট্রান্সফার স্প্রিড অনেক দ্রুত।
- অনেক বেশি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সিস্টেম।
- কিছু অপকারিতা
- এই সিস্টেমে নেটওয়ার্ক ইন্সটলেশন এবং কনফিগারেশন অনেক বেশি জটিল।
- এই টপোলজিতে খরচের পরিমান সবচেয়ে বেশি।
শেষ কিছু কথা
নেটওয়ার্ক টপোলজি নিয়ে আজকের আর্টিকেল টি এখানেই শেষ করছি। আর্টিকেল থেকে কিছু শিখে থাকলে আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। নেটওয়ার্ক টপোলজি নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্ক এ গিয়ে আরো বিস্তারিত পড়তে পারেন।
টেকনোজলি রিলেটেড ভিডিও পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল টি এখান থেকে সাবসক্রাইব করে নিতে পারেন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে করে ফেলুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
স্যার, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখা আমাদের উপকারে আসবে।
ধন্যবাদ আপনার পজিটিভ কমেন্টের জন্য। এখন আর আগের মত লিখার সময় বের করতে পারছিনা। দোয়া করবেন যেন আপনাদের জন্য আরো ভালো কিছু ইনফরমেটিভ ব্লগ লিখে যেতে পারি। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা নিরন্তর…
অনেক দরকারি পোষ্ট । আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান কমেন্টের জন্য, কিন্তু একই সাইট এ এতবার লিঙ্ক বসিয়ে তেমন কোন পায়দা নেই প্রিয় ভাই। চেষ্টা করুন অন্য সাইট থেকে আপনার সাইটের জন্য পজিটিভ ওয়েতে লিঙ্ক নেওয়ার জন্য। আপনি অনেক আশা ভরসা নিয়ে অনেক গুলো পোস্টে কমেন্ট করছেন শুধুমাত্র নিজের সাইটের লিঙ্ক বসানোর জন্য। তবুও শুভেচ্ছা নিরন্তর প্রিয় ভাই…